Friday, March 2, 2012

খসড়া টাইটেল পেজ



এটিএন বাংলা চ্যানেলের 'আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতা-২০১২' অনুষ্ঠানের জন্য এই খসড়া টাইটেল পেজটি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীম।

Bangla Calligraphy title page 'antorzatik kirat protijogita 2012' means-'International Quran recitation contest 2012' made by Bangladeshi famous calligrapher Mohammad Abdur Rahim.

Saturday, February 25, 2012

বাংলাদেশের দুটো নতুন ক্যালিগ্রাফি















মনোগ্রাম
বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন



বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি বলতে ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফি যেমন- বাশের কলম দিয়ে করা হয়, সেটা খুব বেশি একটা দেখা যায় না। অন্যদিকে ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং অর্থাৎ রঙ-রেখায় হরফ দিয়ে ক্যালিগ্রাফি চর্চা বেশি দেখা যায়। বাঙলা ক্যালিগ্রাফি যেমন হচ্ছে, তেমনি আরবি ক্যালিগ্রাফিও প্রচুর হচ্ছে। মোহাম্মদ আবদুর রহীমের নতুন ক্যালিগ্রাফি দেখুন।




এক. সাব্বি হিসমা-আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন। ক্যানভাসে এক্রিলিক রঙ।





দুই. আল্লাহ, লাইলাহা ইল্লাল্লাহ। হ্যান্ডমেড পেপারে একরামিন রঙ।





ডিজিটাল ক্যালিগ্রাফি

Friday, February 10, 2012

ক্যালিগ্রাফি : নান্দনিকতার ভিন্ন মাত্রা



বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে পরিপূর্ণ ক্যালিগ্রাফি সেন্টারের প্রথম একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। বিশেষকরে ক্যালিগ্রাফির নান্দনিক দিক নিয়ে অধ্যয়ন এবং ক্যালিগ্রাফির প্রদর্শনীর আয়োজন, ক্যালিগ্রাফি শিল্পী এবং তাদের শিল্পকর্ম নিয়ে প্রথম একটি সামগ্রিক তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা হচ্ছে। এসবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, একটি ভিন্ন মাত্রার শিল্পকলার বাস্তব চিত্র তুলে ধরা।

ক্যালিগ্রাফি শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম আরো সৃজনশীল হতে পারে এজন্য ব্যাপকভিত্তিক কর্মশালার আয়োজন করা। এতে শিশুদের সাথে বয়স্করাও ক্যালিগ্রাফির নান্দনিকতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।



গবেষকরা বলছেন, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি আরবি লিপিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ইসলাম পূর্ব সময়ে মক্কা নগরীতে আরবি লিপি প্রথম প্রচলন করেন বিশর ইবনে আবদুল মালিক আল কিন্দি। তিনি উত্তর আরবের হিরা এবং আনবার অঞ্চলের অধিবাসীদের কাছ থেকে নাবাতিয়ান লিপি লেখার শৈল্পিক জ্ঞান অর্জন করেন। প্রাচীন তথ্য-প্রমাণে দেখা যায়, আরবরা ইসলামের আগে থেকেই আরবি লিপিতে লেখালেখি করত। এছাড়া সেময় ইহুদি এবং খ্রিস্টানরা তাদের বইপত্র হিব্রু এবং সিরিয়াক লিপির সাথে আরবিতেও লিখত। সপ্তম শতাব্দীর প্রথম থেকেই আরবি ক্যালিগ্রাফি বিশেষকরে হেজাজে শিল্পিত হয়ে উঠতে থাকে।

আরব উপদ্বীপে ইসলাম প্রসারের সাথে সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্ব পায় আরবি লিপি। পবিত্র কুরআন আরবিতে অবতীর্ণ হওয়ায় আরব-অনারব মুসলমানদের কাছে ইসলামের ভাষা হিসেবে আরবি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সুন্নাহ নথিভুক্ত ও সংরক্ষণের জন্য আরবি লিপির ব্যবহার অনিবার্য হয়ে ওঠে। ইসলামের মৌলিক বিধি-বিধান ও শিক্ষা লাভের জন্য মুসলমানরা আরবিতে পড়া ও লেখার বিষয়ে আগ্রহী। সুতরাং আরবি ক্যালিগ্রাফি খুব দ্রুত উন্নয়ন ও বিকাশ লাভ করেছে। আরবি ক্যালিগ্রাফি আরব বিশ্ব ছাড়িয়ে অনারব দেশগুলোতে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এটা এখন এমন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে যে, আরবি ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যে অন্যান্য দৃশ্যমান শিল্পকলার শীর্ষমানের সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। গবেষকরা আরবি ক্যালিগ্রাফিকে ’লিভিং আর্ট’ বা জীবন্ত শিল্পকলা বলে অবিহিত করছেন।

আরবি ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নের প্রাথমিক পর্যায়ে লিপির ভেতর শৃঙ্খলা ও সুচারুবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। তখন একে প্রশাসনিক কাজেই প্রধানত ব্যবহার করা হত। আরবি লিপি গোলায়িত অর্থাত টানা হাতের পেঁচানো লেখা এবং জ্যামিতিক স্বভাবের দুই বৈশিষ্ট্য নিয়ে উন্নতি লাভ করে। হরফ সঠিক আকার ও আকৃতিতে লেখার পদ্ধতি এবং হরফ পৃথকীকরণ চিহ্ন যাকে নোকতা বলে, তা তখনও বের হয়নি। হরফে হরফে, শব্দে শব্দে, বাক্য, যতি চিহ্ন প্রভৃতি ব্যবহারের বিষয়ে কোন সুষ্পষ্ট বিধি দেখা যায়নি। এবিষয়ে জনমনে দ্বিধা-দ্বন্ধ কাজ করত। বিশেষ করে অনারব বিশ্বে দ্রুত মুসলমাদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আরবি লিপির ভেতর এসব অসমঞ্জস্যতা দূর করার এবং সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। এপ্রেক্ষিতে নোকতা (হরফ পৃথকীকরণ চিহ্ন) এবং তাশকীল (স্বরচিহ্ন) পদ্ধতি উদ্ভাবন ও প্রয়োগ করেন আবুল আসওয়াদ আল দোয়ালী (মৃত্যু-৬৮৮ই.)। এরপর আল খলিল ইবনে আহমদ আল ফারাহিদী (মৃত্যু-৭৮৬ই.) আবুল আসওয়াদের তাশকীল পদ্ধতিকে পুণঃসংস্কার করেন। ১১ শতকের গোড়া থেকে আন্তর্জাতিকভাবে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে এবং এতে ছয়টি স্বরচিহ্ন-কার হচ্ছে : ফাতাহ(আ-কার), দাম্মাহ(উ-কার), কাসরাহ(ই-কার), সুকুন(স্বরচিহ্ন মুক্ত চিহ্ন), সাদ্দাহ(দিত্ত্ব ব্যাঞ্জন বর্ণ চিহ্ন) এবং মাদ্দাহ(স্বরকে দীর্ঘকরণ চিহ্ন), এটা আলিফ প্রয়োগের মাধ্যমেও করা যায়।

উমাইয়া শাসন আমল হচ্ছে আরবি লিপির পরিবর্তনকালীন পর্যায়। কুফী লিপিতে ক্যালিগ্রাফি করা এ সময় পেশায় পরিণত হয়। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ান একটি নতুন লিপির আবিস্কার করেন। তিনি এর নাম দেন মানসুব লিপি। উমাইয়াদের একটি স্মরণীয় কীর্তি হচ্ছে, জেরুসালেমে প্রাচীন আল কুদস নগরীতে মসজিদ আল আকসার পাশে কুব্বাতুস সাখরা(ডোম অব রক) মসজিদ নির্মাণ এবং তাতে ক্যালিগ্রাফির যুগান্তকরী প্রয়োগ।

এরপর আব্বাসীয় আমলে আরবি লিপি সৌন্দর্যমণ্ডিত ও উন্নয়ন একই সাথে হতে থাকে।
পর পর তিনজন খলিফার উজির আবু আলী ইবনে মুকলাহ(মৃত্যু-৯৪০ই.) প্রথম আরবি লিপির আনুপাতিক লেখন পদ্ধতি আবিস্কার করেন কোন জ্যামিতিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার না করেই। ইবনে মুকলাহ নাশখ(কপি করা) এবং সুলুস(এক তৃতীয়াংশ) লিপির আধুনিক আকার-আকৃতি রূপায়ন করেন। তিনি গোলায়িত টানা হাতের পেচাঁনো কুফি লিপির উদ্ভাবন করেন এবং তার উত্তরসূরী ইরাকী কুরআন বিশেষেজ্ঞ ক্যালিগ্রাফার আলী বিন হিলাল ইবনে আল বাওয়াব এ লিপির উন্নয়ন করেন।

ক্যালিগ্রাফির ব্যাপক এবং শৈল্পিক প্রয়োগে চমৎকারিত্ব দেখান ফাতেমী খলিফাগণ। প্রাসাদ, মসজিদ, ও সিংহাসন সর্বত্র অঙ্গসজ্জা ও অলংকরণের কাজে ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার শিল্পকর্ম হিসেবে গৃহীত হয়। ক্যালিগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং ক্যালিগ্রাফির বিভিন্ন ধারার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সব রকম সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য হয়।



ওসমানীয়দের মিসর দখলের প্রেক্ষাপটে তুর্কীরা নাশখ লিপিতে অসাধারণ শৈল্পিক সুষমা আনয়ন করে। কারণ তুর্কীরা আগে থেকে গ্রীক ও উর্দু হরফের হাতে লেখার সুক্ষ্ম সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল। ১৬ শতকের মধ্যভাগে হাফিজ ওসমান ও আহমদ কারাহিশারি নাশখ লিপিকে সৌন্দর্যের চুড়ান্ত মানে উন্নীত করেন। তুর্কীদের হাত ধরে আরবি ক্যালিগ্রাফি মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, আফগানস্তিান এবং মোগলদের হাত ধরে ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

মিসরে আরবি ক্যালিগ্রাফির উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় কাজ হচ্ছে পবিত্র কাবার গিলাফে স্বর্ণতন্তুতে কুরআনের আয়াতের ক্যালিগ্রাফি। খেদিভ ইসমাইলের আমন্ত্রণে বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ও নকশা শিল্পী আবদুল্লাহ বেক জুহদী মিসরে আগমন করেন। তিনি কাবার গিলাফ(কিসওয়াহ) বিশেষভাবে নকশা এবং সুলুস লিপিতে ক্যালিগ্রাফি করেন। মিসরে ক্যালিগ্রাফি রেনেসাঁর অগ্রনায়ক হিসেবে তাকে অভিহিত করা হয়। বাদশাহ ফাওয়াদের সময়ে ক্যালিগ্রাফিকে শিল্পকর্ম হিসেবে প্রদর্শনী করা হয়। বিখ্যাত তুর্কী ক্যালিগ্রাফার মুহাম্মদ আবদুল আজিজ মিসরে অবস্থান করে আরবি ক্যালিগ্রাফির একটি ধারা প্রতিষ্ঠা করেন এবং হরফকে স্বর্ণমণ্ডিত করার কৌশল প্রচলন করেন।
.


বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি এবং সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র দশটি জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী করেছে। ক্যালিগ্রাফির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান করছে ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি। এছাড়া ক্যালিগ্রাফি ফাউন্ডেশন, ক্যালিগ্রাফি একাডেমিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান ক্যালিগ্রাফির অঙ্গনে কাজ করে চলেছে। প্রতি বছর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা সুনাম অর্জন করে চলেছেন। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পীদের শিল্পকর্ম সংগ্রহ করা হচ্ছে বিদেশের বিভিন্ন জাদুঘরে । ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে গবেষণাকর্ম প্রকাশিত ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা হচ্ছে।



তবে সামাজিকভাবে ক্যালিগ্রাফির একটি বড় ধরণের অর্জন হচ্ছে, ক্যালেন্ডার, ভিউকার্ডে এর ব্যাপক ব্যবহার। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম শোভা পাচ্ছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিফট আইটেম হিসেবে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম প্রদান বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি একটি নান্দনিক শিল্পকলা হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

Sunday, September 19, 2010

The artistic and cultural expression of Islamic calligraphy in Bangladesh.


Re-nowned Bangladeshi Calligrapher Mohammad Abdur Rahim writes a important article on calligraphy in Bangla language. Name of the article- The artistic and cultural expression of Islamic calligraphy in Bangladesh.
মোহাম্মদ আবদুর রহীম
বাংলাদেশের ইসলামী ক্যালিগ্রাফি
শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ
মানব হৃদয়ের গভীরে সৌন্দর্য বোধের প্রতি যে তিয়াস, তা মেটায় শিল্পকলা।১ হৃদয় গহীনে একই সাথে জৈবিক ও মানবিক বা নৈতিক শিল্প পিপাসা পরস্পর ঠেলাঠেলি করে একে অপরকে পেছনে ফেলার জন্য। চোখ দিয়ে সৌন্দর্য আস্বাদন, হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখা আর কান দিয়ে যে সুর সৌন্দর্যের খোরাক মনের কাছে পৌঁছে তা জৈবিক বা নৈতিক হতে পারে। ধর্মই এখানে সৌন্দর্যের প্রতিরূপ বিবেচনা করে এর কতটা গ্রহণীয়-বর্জনীয় এবং বৈধ-অবৈধ, পরিণতি কী হতে পারে তা নির্ধারণ করে দেয়।২ সুতরাং যে শিল্পকলা মনের জৈবিক আকাংখাকে জাগিয়ে তোলে, লজ্জার চাদরকে ছিন্ন ভিন্ন করে, পবিত্র চেতনাকে বিবশ করে দেয়। সেটার পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ এবং সমাজ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তা ভয়ঙ্কর টর্নেডোর আঘাতের মতো। একথার সাথে সুকুমার শিল্প, অন্যদিকে পুজা অর্চনার জন্য শিল্প বলে যে শিল্পজগত রয়েছে সে সম্পর্কেও ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম সুস্পষ্ট সীমানা নির্দেশ করেছে এবং এর পরিণতি সম্পর্কে অবহিত করেছে।৩ আত্মা বা রুহ৪ নিষ্কলুষ ও পবিত্র শিল্পকে গ্রহণ করতে চায় এবং এই নির্মল আনন্দদায়ক ও পূণ্যানুভূতি জাগানিয়া শিল্পের রস আস্বাদনে সে পরিতৃপ্ত হয়।৫
ক্যালিগ্রাফি এমনই একটি শিল্পকলা । যাকে একদিকে বিশ্বশিল্পকলার অরিজিন বলা হয়েছে।৬ অন্যদিকে একে বেহেস্তী শিল্পকলা (্আর্ট অব হেভেন) এবং আধ্যাত্মিক শিল্পকলা বলা হয়েছে।৭ ইসলাম সৌন্দর্যকে পরিপূর্ণ রূপ দান করেছে।৮ ক্যালিগ্রাফি তাই একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পকলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে ইতোপূর্বে বাংলাভাষায় বেশ কিছু লেখালেখি হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের শিল্পাঙ্গনে ক্যালিগ্রাফির অবস্থান কী, শৈল্পিক এবং সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে এর প্রভাব ও বিকাশ কতটুকু এবং ভবিষ্যতে এ শিল্পকলার অবস্থান কী হতে পারে তা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করবো। এজন্য শিল্পকলার অঙ্গনে যারা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করছেন। এ বিষয়ে লেখালেখি করছেন এবং করেছেন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু নিয়ে একটি সার্বিক আলোচনার প্রয়াস থাকবে এখানে। বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির আগমন ১২ শতকে সালতানাত আমলে। ইসলামী শিল্পকলার প্রধান উপাদান ক্যালিগ্রাফির উন্নয়নে যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেছিলেন সুলতানগণ। যেজন্য সে সময় (১১৯২-১৫২৬) নির্ভেজাল আরবী ক্যালিগ্রাফির একটি স্বতন্ত্র ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধারা তুগরার প্রচলন দেখা যায় । বাংলায় এই তুগরার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আরবি হরফের প্রয়োগ চাতুর্য্যে একে পানিতে ভাসমান হাঁস, তীর-ধনুক, চালাঘর, পানিতে চলমান নৌকার আকৃতিতে দেখা যায়।৯ সুলতানী আমলের পর মুঘল আমলে (১৫২৬-১৮৫৬) আরবী ক্যালিগ্রাফির সাথে নাস্তালিক ও শিকাস্তে নাস্তালিক ফার্সিধারা সংযুক্ত হয়।১০ ইংরেজ আমলে (১৮৫৭-১৯৪৭) বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফির চর্চা প্রায় অস্তমিত হয়ে পড়ে। ঢাকার নবাব-নাজিমদের প্রচেষ্টায় কিছু কিছু ধারা যেমন গুলজার, তালিক, নাসখ প্রভৃতির প্রচলন ছিল ও ধীরে ধীরে তা সীমাবদ্ধ হয়ে আসে। কলকাতায় ছাপার যন্ত্রে এ সময়ে কলকাতা ছাপা নামে একটি সুদূর প্রসারী ধারা এদেশে প্রচলন করা হয়। যেজন্য সাধারণ মুসলিম জনসমষ্টি এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে আরবীর মূল ধারাগুলোর এখানে বলা যায় বিলুপ্তি ঘটে, এত সবের মধ্যেও লৌখনু ছাপা যেটি আরবী নাসখী ধারার এ দেশীয় প্রকরন, সেটি কোনমতে টিকে থাকে ।১১ ১৯ শতকে ঢাকার বেচারাম দেউড়ীর মির্জা গুলাম হোসাইনের পুত্র মির্জা বাহাদুর হোসাইনের একটি ক্যালিগ্রাফির সন্ধান পাওয়া যায়। নাস্তালিক শৈলী গুলজার ধারায় অঙ্কিত এই ক্যালিগ্রাফি চিত্রে মুসলিম প্রার্থনার তাসবিহ চমৎকার ফুলেল আঙ্গিকে করা হয়েছে। হরফের ভেতর ফাঁকা স্থানটি ফুল-লতা-পাতার সুক্ষ্ম নকশা দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। হরফকে অন্য হরফের মধ্যে চাতুর্যের সাথে প্রবিষ্ট করা হয়েছে ।১২ স্থানীয় ক্যালিগ্রাফারদের এই সুনিপুন দক্ষতা কর্মকুশলতা পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ইংরেজ আমলে এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকেনি। ১৯ শতকের প্রথম দিকে আবুল ফাতাহ সিরকা নামের একটি কুরআন স্ক্রল ক্যালিগ্রাফি করেন। যাতে বড় হরফে “ওয়া আলাল ইমাম হুসাইন আল শহীদ আল কারবালা” এবং হরফগুলো ক্ষুদ্্র হরফ দিয়ে লেখা হয়েছে নাসখ শৈলীতে।১৩ অষ্টাদশ শতকে ঢাকার ডেপুটি গভর্ণর মির্জা লুৎফুল্লাহ মাকসুর একজন খ্যাতিমান ক্যালিগ্রাফার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঢাকার প্রশাসক নায়েব নাজিম নুসরাত জং বাহাদুর একজন ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফার ছিলেন, তার অনেক ছাত্র পরবর্তীতে খ্যাতি লাভ করেন। এছাড়া নাস্তালিক লিপিতে ওস্তাদ আগা আবদুল আলীর ক্যালিগ্রাফি সমাজের ধনী ও আগ্রহী ব্যক্তিরা সংগ্রহ করেন। মুন্সী আরহাম ছিলেন সিকাস্তালিপির ওস্তাদ। ঢাকার হোসনী দালানের গায়ে উৎকীর্ণ লিপির ক্যালিগ্রাফার ছিলেন আলী হোসাইন। ঢাকার আরেক বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার ছিলেন মুন্সী মীর নূর আলী। তিনি ছিলেন নাস্তালিক ও কুফি শৈলীর ওস্তাদ।১৪
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ক্যালিগ্রাফি চর্চার তেমন কোন প্রামাণ্য দলিল আমাদের হাতে নেই। ১৯৬০ সালে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের মিহরাবে, গম্বুজের অভ্যন্তরে যে লিপির উপস্থাপন দেখি, বিশিষ্ট কাতিব সিরাজুল হক ইসলামাবাদী সেগুলোর ডিজাইন করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় পুস্তকে তিনি আরবী ক্যালিগ্রাফি করেছেন ।১৫
ষাটের দশকে বাংলায় ক্যালিগ্রাফি করা যায় কিনা সে বিষয়ে পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। সোসাইটির উৎসাহে শিল্পী আ. রউফ ‘রেনেসাঁ’ শব্দটি ক্যালিগ্রাফি করে আলোড়ন তোলেন।১৬ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি চর্চার একটি আবহ তৈরী হয় শিল্পী ও এ বিষয়ে আগ্রহী লেখকদের ব্যক্তিগত প্রয়াসের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফির শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য প্রধানত দু’ধরনের। এক. শৈলী ভিত্তিক বা ট্রেডিশনাল দুই. পেইন্টিং নির্ভর।১৭
শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির আলোচনায় স্বাভাবিকভাবে নন্দনতত্ত্বের বিষয়টি এসে যায়। আক্ষরিক অর্থে শৈলী বিষয়ে গভীর অভিনিবেশ দাবী করে সংশ্লিষ্ট শিল্পী ও শিল্প সমালোচকদের ওপর। শিল্পীদের কাজের মূল্যায়ন যেহেতু শিল্প সমালোচকরা করে থাকেন, এজন্য ক্যালিগ্রাফি বিষয়ে সমালোচকদের দায় দায়িত্ব একটু বেশী রয়েছে বলে মনে করি। শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এদেশের প্রচলিত আরবী হরফ সম্পর্কে সাধারণের মাঝে যে ধারণা রয়েছে সেটা বিবেচনা করা প্রয়োজন। এ দেশের জনগোষ্ঠির বৃহত্তম অংশ আরবি হরফ বলতে কোলকাতা ছাপার কুরআনের হরফ বুঝে থাকেন। এই হরফ মূলত: নিশ্চল বা গতিহীন টাইপ সেট। এতে হাতের লেখার জীবন্ত প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিও খুব সীমিত পরিসরে লৌখনু ছাপার কুরআন রয়েছে, তবু তা অধিকাংশের কাছে পাঠ করা কঠিন বলে অনুযোগ রয়েছে । সুতরাং শৈলী বিষয়ক নন্দন তত্ত্বের আলোচনায় এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আরবী হরফের শৈলী বিষয়ক বিশুদ্ধতা যেটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেটা আরব দেশসমূহে বিশেষ করে তুরস্কে রয়েছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মগুলো যা গত তিন দশক ধরে শিল্পীগণ করেছেন। তার শৈলী ভিত্তিক বিবেচনা দেশীয় আঙ্গিকে যথেষ্ট আশাপ্রদ। এ কথা এজন্য বলা হচ্ছে, কারণ পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফিতে শৈলীর উৎকর্ষতা উন্নীত এবং আন্তরিক। নিবেদিত প্রাণ শিল্পীগণ একক ও দলগত প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। বিদেশের ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে তাদের সরব অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মত। ২০০৭ সালে তুরস্কের আন্তর্জাতিক ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ৫ জন শিল্পী, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা নুরুল্লাহ, মোরশেদুল আলম, মাসুম বিল্লাহ ও সিদ্দিকা আফরিন লামিয়া অংশগ্রহণ করেন । শিল্পীরা ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশের সদস্য। যেহেতু প্রতি বছর আয়োজিত বিভিন্ন প্রদর্শনীতে শৈলীগত সৌন্দর্যরূপের পরিবর্তন হচ্ছে তাই সাম্প্রতিক শিল্পকর্মের এবং ৩ দশক আগের শিল্পকর্মের শৈলীগত পার্থক্য বেশ বড় ধরনের। সাম্প্রতিক ২০০৮ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র আয়োজিত ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে শিল্পকর্মগুলোতে শৈলীর উৎকর্ষতা চোখে পড়ার মত। হরফের গতি প্রকৃতি, বিভিন্ন ফন্টের নিপুন উপস্থাপন, কম্পোজিশনে নতুনত্ব, এমনকি সাম্প্রতিক মুয়াল্লা শৈলীর বেশ কয়েকটি মান সম্মত কাজ প্রদর্শনীতে স্থান পায় ।১৮
আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দন তাত্ত্বিক স্বরূপ বা দর্শন কি? কয়েকটি বিষয় এর সাথে জড়িত, হরফের সঠিক সেপ ও সাইজ যেটা আল খাত আল মানসুব বা আনুপাতিক লেখনীর সাথে সম্পৃক্ত এবং ইবনে বাওয়াবের মানসুব আল ফায়েক অর্থাৎ সৌন্দর্যময় লেখনী আক্ষরিক অর্থে আরবী ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট। এছাড়া ইয়াকুত আল মুস্তাসিমীর কলম কাটার কলা কৌশল এতে পূর্ণতা এনেছে, কালির প্রস্তুতবিধি, ব্যবহার নীতিমালা। কাগজ বা উপায়-উপকরণ একটি নির্দিষ্ট বিধিমালার অন্তর্ভূক্ত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সুলুস লিপির আলিফটি ক্যালিগ্রাফি কলম দিয়ে লিখতে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। র’স বা মাথা হবে দেড় থেকে দুই ফোটা বা নোকতা বরাবর এবং জেসম বা শরীরটি ৫-৬ নোকতা বরাবর লম্বা হবে। শেষে মাথার নীচে কলমের ডান কোনা দিয়ে পূরণ করতে হয় । এটা হল সাধারণ নিয়ম কিন্তু হরফের আকৃতি ও পরিমাপ ঠিক রাখার সাথে সাথে এর রৈখিক বাঁক ও ভাজগুলোও যথাযথ করতে হয়। এটি সরাসরি নন্দনতত্ত্বের সাথে সংশ্লিষ্ট যেটা হাতে কলমে ওস্তাদ ছাত্রকে শিখিয়ে থাকেন। দর্শককেও এ বিষয়ে হাতে কলমে আত্মস্থ করতে হয়। আর ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ হাতে কলমে ক্যালিগ্রাফি শিখিয়ে আসছে ১৯৯৮ সাল থেকে। যেজন্য নবীন ক্যালিগ্রাফারদের বৃহৎ অংশটি শৈলীতে দ্রুত উন্নতি করতে পেরেছে।১৯
বাংলাদেশে শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি যারা চর্চা করেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন, শহীদুল্লাহ এফ. বারী, বসির মেসবাহ, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, আবু দারদা, নেসার জামিল প্রমুখ। আরিফুর রহমানের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে খাগের কলমের সরাসরি প্রয়োগ অনুপস্থিত। কিন্তু তিনি শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির প্রতি যতœশীল। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্মে সুলস, নাসখ, দিওয়ানী, কুফী, রুকআ, নাস্তালিক, রায়হানী, মুহাক্কাক, ও মুয়াল্লা শৈলীর উপস্থাপন লক্ষ্য করা যায়। রঙের মাধ্যম হিসেবে পানি রং, কালি, এ্যাক্রিলিক, তেল রং মেটাল রং প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া কাগজ, ক্যানভাস, কাঠ, পাথর, ধাতব মাধ্যমে ক্যালিগ্রাফি করা হয়ে থাকে।
চিত্রকলায় যেমন শৈলীভিত্তিক ক্যালিগ্রাফির উপস্থাপন রয়েছে তেমনি স্থাপত্যে বিশেষ করে মসজিদ গাত্রে আরবি ক্যালিগ্রাফি ইদানিং বাংলা ক্যালিগ্রাফির শৈলী ভিত্তিক উপস্থাপন দেখা যায়। শিল্পী আরিফুর রহমান ২০০২ সালে কুমিল্লার গুনাই ঘর ও ২০০৬ সালের শেষ নাগাদ বরিশালের গুঠিয়ায় ২টি মসজিদে বাংলা-আরবীতে শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেছেন।২০ শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম ২০০০ সালে চট্টগ্রামে পতেঙ্গায় সলগোলা জামে মসজিদ, ২০০৩ সালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানার, সুন্ধিসার জামে মসজিদ , ২০০৫ সালে ঢাকা সেনানীবাসে সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদ, ২০০৪ সালে বারিধারা ডিওএইচএস মসজিদ, ২০০৬ সালে ঢাকা উত্তরার ৫নং সেক্টর জামে মসজিদ ,২০০৭ সালে হবিগঞ্জে শাহ সোলেমান ফতেহ গাজী (রহ:) দরগাহ-এ এবং ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে পুরান ঢাকায় একটি ইমারাত ভবনের চারটি ফটকে আগ্রার তাজমহলের ফটকের অনুরূপ সুরা ইয়াসিনের শৈলী ভিত্তিক ক্যালিগ্রাফি করেন।২১ এসব স্থানে কুফি, সুলস, বেঙ্গল তুগরা, নাসখ, দিওয়ানী প্রভৃতি শৈলীতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। শিল্পী মনিরুল ইসলাম, শহীদুল্লাহ এফ. বারীসহ কয়েকজন শিল্পী বাংলাদেশের বিভিন্ন মসজিদ, ধর্মীয় ইমারতে ক্যালিগ্রাফি করেছেন।২২
বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বৃহত্তম অংশ হচ্ছে পেইন্টিং নির্ভর। আর এই পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে প্রবীন ও খ্যাতিমান শিল্পী মুর্তজা বশীরের শিল্পকর্ম এক অনন্য দৃষ্টান্ত । বাংলাদেশের শিল্পকলার পেইন্টিংয়ে কিভাবে ক্যালিগ্রাফির সার্থক উপস্থাপন হতে পারে তা দেখিয়েছেন তিনি। তাকে বাংলাদেশের পেইটিং ক্যালিগ্রাফির পথিকৃত বলেছেন শিল্পবোদ্ধারা।২৩ প্রবীণ শিল্পী আবু তাহের, মরহুম শামসুল ইসলাম নিজামী, সবিহ-উল আলম, ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহিম মণ্ডল, আমিনুল ইসলাম আমিনসহ অর্ধ শতাধিক প্রবীণ নবীন শিল্পী আরবী-বাংলা হরফকে অনুসঙ্গ করে অসাধারণ সব ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং করে চলেছেন। শিল্পী আবু তাহের অর্ধবিমূর্ত ঢংয়ে পেইন্টিং করে থাকেন। আরবী হরফের পরস্পর ছন্দ ও গীতিময়তা একটি টান টান আকুলতা নিয়ে ফুটে ওঠে তার শিল্পকর্মে। রং, ফর্ম ও রেখার আশ্চর্য সম্মিলন দেখা যায় তার ক্যালিগ্রাফিতে। শিল্পী সবিহ-উল আলমের ক্যালিগ্রাফিতে ত্রিমাত্রিক ব্যঞ্জনা ফুটে ওঠে। শিল্পী ড. আব্দুস সাত্তারের ক্যালিগ্রাফিতে প্রাচ্যকলার আবেশ মূর্ত হয়ে ওঠে। সাইফুল ইসলাম নিজস্ব স্টাইল ও রংয়ের সমন্বয়ে এক ভিন্ন জগত তৈরী করেছেন। তার ক্যালিগ্রাফিতে তাই নাগরিক ক্যালিগ্রাফির মূখরতা দেখা যায়। ইব্রাহীম মণ্ডলের ক্যালিগ্রাফিতে বাংলার নিসর্গ, ফর্ম ও রেখার সাথে রঙের উজ্জ্বল্য উপস্থিতি দশর্ককে আকর্ষণ করে। আমিনুল ইসলাম আমিন চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বাস্তব জগতের সাথে আধ্যাত্মিক ক্যালিগ্রাফির সমন্বয় তুলে ধরেন তার শিল্পকর্মে। নিপুন তুলির ছোয়ায় তার শিল্প ভাস্বর হয়ে ওঠে।২৪
এছাড়া আরো খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী রয়েছেন, যেমন- আমিরুল হক, মাহবুব মুর্শিদ, ফরেজ আলী, রেজাউল করীম, রাসা, প্রমুখ তাদের ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং ও ভাষ্কর্য চর্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি অঙ্গনে বিশেষ অবদান রেখে চলেছেন। পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে হরফ যেহেতু অনুসঙ্গ হয়ে আসে, সেক্ষেত্রে শৈলীর উপস্থাপন হয় গণ্য। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে শৈলীও সমানভাবে পেইন্টিংয়ে উঠে আসে। তবে সেটা সংখ্যায় একেবারে হাতে গোনা। মূলত: পেইন্টিং ক্যালিগ্রাফিতে, রং, ফর্ম, দর্শন চিন্তা, ব্যাকরণ প্রভৃতি লক্ষ্য রাখা হয়। পেইন্টিংয়ে শিল্পকর্ম হতে গেলে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজন শিল্পী সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখেন। ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে প্রায় সব শিল্পকর্মে এমন উপস্থাপন লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে পবিত্র কুরআন হাদিসের বাণী মূখ্য হয়ে আছে। এর সাথে শুধুমাত্র হরফের কম্পোজিশন যেমন আরিফুর রহমানের আলিফ বিন্যাস, ইব্রাহীম মণ্ডলের আলিফ নৃত্য শিল্পকর্মের কথা উল্লেখ করতে হয়।২৫ বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি শিল্পে বাংলালিপি নির্ভর বহু উল্লেখযোগ্য কাজ রয়েছে। ড. আবদুস সাত্তার, সাইফুল ইসলাম, ইব্রাহীম মণ্ডল, আরিফুর রহমান সহ অধিকাংশ শিল্পী তাদের শিল্প চর্চায় বাংলা ক্যালিগ্রাফিকে সযতেœ লালন করেছেন।২৬ এসব শিল্পকর্মে হরফের প্রান্তীয় স্ট্রোকগুলো প্রলম্বিত করে এবং কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে হরফকে ভেঙ্গেচুরে সমন্বয় ও ছন্দায়িত করার প্রয়াস চালানো হয়। অনেক শিল্পী তাদের কাজে বাংলা ক্যালিগ্রাফির নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে প্রাধান্য না দিয়ে আরবী কুফি, সুলুস প্রভৃতির আদলে করতে চেয়েছেন, এতে অনেক শিল্পবোদ্ধা ভিন্ন মতামতও ব্যক্ত করেছেন।২৭ সাম্প্রতিক সময়ে পেইন্টিংয়ে যে বাংলা ক্যালিগ্রাফি দেখছি সেটা ৯০ দশকের শেষ দিকেও তেমন লক্ষ্য করা যায়নি।২৮ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প আক্ষরিক অর্থে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তিন দশক পর এই শিল্পের পথ চলায় প্রয়োজনীয় উপাদান উপকরণ যেমন সহজ লভ্য হয়েছে। তেমনি এর প্রতিষ্ঠায় একটি মজবুত ভিত্তিও পেয়েছে।২৯ বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কে জানার জন্য বইপত্র, পত্রিকা, ম্যাগাজিনের ওপর নির্ভর করতে হয়। এ সম্পর্কে ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটের এখন দেখা মেলে।৩০ একটা কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শিল্পীদের ব্যক্তিগত প্রয়াসকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিতে হয়। সেই সাথে যারা এ শিল্পকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাদের অবদানও কম নয়। লেখালেখি, গবেষণার মাধ্যমে এ শিল্পের ইতিহাস সংরক্ষণ গতি প্রকৃতি মূল্যায়ন ও সবার কাছে এর পরিচয়, সৌন্দর্য, গুরুত্ব, অপরিহার্যতা তুলে ধরার জন্য নিরলস সাধনা যারা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অবদান যেন আমরা ভুলে না যাই। এদেশে ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন, প্রসার ও জনপ্রিয় করতে ইতোমধ্যে যে রচনা সম্ভার ও বইপত্র প্রকাশ পেয়েছে তা নিতান্ত কম নয়। শতাধিক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, প্রতিবেদনের সাথে বাংলাভাষায় এর ইতিহাস ক্রমধারা, শৈল্পিক বিশ্লেষণ নিয়ে গ্রন্থও রচনা করা হয়েছে।৩১ বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ওপর সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রিও নিচ্ছেন অনেকে।৩২
ক্যালিগ্রাফির এই বিস্তৃতিতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেশ লক্ষণীয় প্রভাব পড়েছে। ৮০ দশকের গোড়ার দিকে ক্যালেন্ডারে সিনেমার নায়িকা ও নারীচিত্র প্রধান উপাদান ছিল। কিন্তু এখন সেখানে ক্যালিগ্রাফি, মসজিদ বা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলীই একচ্ছত্র স্থান দখল করে চলেছে। সরকারি বেসরকারি ইমারতে ইন্টেরিয়র সজ্জায় ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম বড় ধরনের স্থান করে নিয়েছে। এমন কি বিদেশে সরকারি উপহার সামগ্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম গুরুত্ব লাভ করেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বহু ইমারতে ক্যালিগ্রাফি মুরাল, ফ্রেস্কো প্রভৃতি প্রাধান্য লাভ করছে।৩৩
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ক্যালিগ্রাফির যে বিস্তৃতি, তার মূল্যায়নে দেশের প্রথিতযশা কয়েকজন শিল্পীর মন্তব্য এখানে তুলে ধরছি। শিল্পী মুর্তজা বশীর বলেন, আমি একজন পেইন্টারের দৃষ্টি দিয়ে এটা বলতে পারি অক্ষর দিয়ে পেইন্টিং করার একটি প্রয়াস এখানে রয়েছে যাতে ক্যালিগ্রাফি ছাপিয়ে নান্দনিক রসের অনুভব আমরা পেতে পারি। শিল্পী আবু তাহের বলেন, বেশ কিছু শিল্পী গভীর মমত্ব ও আনুগত্য নিয়ে ক্যালিগ্রাফি চর্চায় মনযোগ দিয়েছেন এবং আনন্দের বিষয় এদের মধ্যে কেউ কেউ শিল্পবোদ্ধাদের মনে গভীর রেখাপাত করতে সক্ষম হয়েছেন। শিল্পী সবিহ-উল আলম বলেন, ১৬২টি ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম নিয়ে ৬ষ্ঠ ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৩ গুণে মানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে, এটা নি:সন্দেহে যেমন আনন্দের তেমনই গৌরবের। স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পী মনিরুল ইসলাম ক্যালিগ্রাফিকে মিস্ট্রিক্যাল ফর্ম উল্লেখ করে বলেন বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য তিনি শিল্পীদেরকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। ১২তম দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রান্ড প্রাইজ প্রাপ্ত ইরানের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি শিল্পী সিদাঘাত জাব্বারী বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি চর্চার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এজন্য তিনি ক্যলিগ্রাফী প্রদর্শনীগুলোর আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। পাকিস্তানের বিখ্যাত শিল্পী গুলজীও বাংরাদেশের ক্যালিগ্রাফির প্রশংসা করেছেন এবং উত্তরোত্তর উন্নয়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।৩৪
ক্যালিগ্রাফি চর্চা বাংলাদেশে এখনো সেইভাবে প্রাতিষ্ঠানিক রূপলাভ করেনি। শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ কোর্স, ওয়ার্কশপ, ডেমন্সট্রেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ, তবে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভূক্ত কিংবা আলাদা ফ্যাকাল্টিও হতে পারে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফির ভবিষ্যত উজ্জ্বল। ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও বিক্রির জন্য একটি স্থায়ী গ্যালারী এখনো নেই। তবে এরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে এমন আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে।৩৫ ব্যক্তিগতভাবে ক্যালিগ্রাফি আর্কাইভ গড়ে উঠছে।৩৬ উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য যে আয়োজন ও উপায়-উপকরণ ও ভিত্তির প্রয়োজন, তার বহুলাংশ ইতোমধ্যে জোগাড় হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা ক্যালিগ্রাফার মোহাম্মদ আবদুর রহীম জুলাই, ২০১০ পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক হোসেনী দালানে ক্যালিগ্রাফি শিল্পকর্ম করেন। পবিত্র কুরআনের সুরা আল রহমানের এ ক্যালিগ্রাফি সুলস শৈলীতে প্লাস্টার কাটাই পদ্বতিতে করা হয়। কালো ব্যাকগ্রাউন্ডের ওপর সোনালী রংয়ের এ ক্যালিগ্রাফি ইসলামী ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহণ করে।
বাংলাদেশে ক্যালিগ্রাফি শিল্প সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও বলিষ্ঠ শিল্প মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এবং এগিয়ে চলেছে। এর ভবিষ্যত উজ্জ্বল ও কুসুমাস্তীর্ণ করতে সংশ্লিষ্ট সবার যেমন গুরু দায়িত্ব রয়েছে তেমনি রাজকীয় শিল্পকলা হিসেবে সরকারের অকুণ্ঠ পৃষ্ঠপোষতার দাবি রাখে। বিষয়টিকে বিবেচনার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানাই।
তথ্য সূত্র ও টীকা :
১. ক) সহীহ মুসলিম শরীফে বর্ণিত, ‘আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) নিজে সুন্দর তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।’(রিয়াদুস সালেহীন, ২য় খণ্ড, ৬১২ নং হাদীস, পৃ. ১২৮) সুতরাং আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি মানুষকে সুন্দর অবয়বে তৈরী করেছেন (সূরা ৯৫, আয়াত-৪) তিনি নিজেও শিল্পী (সূরা ৫৯, আয়াত-২৪)
খ) ড. আবদুস সাত্তার, প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধান, পৃ : ১১-১৬।
২. তোমরা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতার নিকটে যেওনা (সূরা ৬, আয়াত-১৫১) আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বিশ্বাসী পুরুষ-নারীকে দৃষ্টি অবনত, লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ এবং দেহের সৌন্দর্য-অঙ্গকে ঢেকে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন (সূরা ২৪ : আয়াত ৩০-৩১)
৩. ড. আবদুস সাত্তার, প্রকৃত শিল্পের স্বরূপ সন্ধান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা, ২০০৩, পৃ-৬০।
৪. পবিত্র কুরআনে রুহের প্রকৃতিকে নফস বলেও অভিহিত করা হয়েছে। স্বভাবগতভাবে নফসকে তিন ধরনের উল্লেখ করা হয়েছে।
এক. নফস আম্মারাহ- যা মন্দ কর্মপ্রবন। (সূরা ১২ : আয়াত-৫৩)
দুই. নফস লাউয়ামাহ- যা মন্দ কাজের পর অনুতপ্ত হয়। (সূরা ৭৫ : আয়াত-২)
তিন. নফস মুতমাইন্নাহ- যা সৎ ও উত্তম কর্মপ্রবণ ও পরিতৃপ্ত আত্মা। (সূরা ৮৯ : আয়াত-২৭)
রুহ সম্পর্কে বলা হয়েছে- রুহ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার একটি আদেশ। (সূরা ১৭, : আয়াত-৮৫)
৫. সৈয়দ আলী আহসান, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৩, পৃষ্ঠা ২১৬-২১৭
৬. শিল্পী আমিনুল ইসলামের একক ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৮ ক্যাটালগ, এবং মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮, পৃ. ৫
৭. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি শৈল্পিক-সাংস্কৃতিক বিকাশ, দৈনিক সংগ্রাম, ঈদ সংখ্যা ২০০৭ (অক্টোবর), পৃ. ২১০
৮. সৈয়দ আলী আহসান, শিল্পবোধ ও শিল্পচৈতন্য, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা, ১৯৮৩, পৃ. ২১৬-২১৭
৯. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, যোগাযোগ পাবলিশার্স, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০০২, পৃ. ৬২
১০. Dr. A. K. M. Yaqub Ali, Select Arabic and Persian Epigraphs, Islamic Foundation Bangladesh, Dhaka, 1988, PP 16-77.
এবং অধ্যাপক ড. সৈয়দ মাহমুদুল হাসান, মুসলিম ক্যালিগ্রাফি, মজিদ পাবলিকেশন, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০০৫, পৃ. ৬৬
১১. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, যোগাযোগ পাবলিশার্স, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০০২, পৃ. ৬২-৬৩।
১২ Catalogue of the special Exhibition of Islamic Art in Bangladesh in Dhaka Museum, April 1978, P-21.
১৩. Do. P-18
১৪. মুহাম্মদ নূরুর রহমান, আরবী ক্যালিগ্রাফীর উদ্ভব ও বিকাশ: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (এমফিল গবেষণা অভিসন্দর্ভ ২০০৫), আরবি বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, পৃ. ৬৭-৬৮
১৫. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, ২০০২, পৃ. ৭৮-৭৯
১৬. মুহাম্মদ নূরুর রহমান, অভিসন্দর্ভ ২০০৫, পৃ. ৬৮
১৭. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ ফেব্র“য়ারী ২০০৭, পৃ. ৮
১৮. ফাতেমাতুজ জোহরা, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আবদুর রহীমের শিল্পকর্ম, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুলাই ২০০৮ ও মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮, পৃ. ৫ এবং সাম্প্রতিক লিপিশেলীতে বিশ্ময়কর আবিস্কার : মো’য়াল্লা ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ৪ জুন,২০০৮, পৃ. ৮
১৯. ক্যালিগ্রাফ আর্ট, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট-২০০৩, ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃ. ৬
২০. ক্যালিগ্রাফি, ১ম সংখ্যা, মার্চ-মে ২০০৮, বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি একাডেমী, ঢাকা, পৃ. ৬
২১. ফাতেমাতুজ জোহরা, বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী শিল্পধারা: ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ১৬ জানুয়ারী ২০০৭, পৃ. ৫ এবং পুরান ঢাকায় তাজমহলের ক্যালিগ্রাফি, ক্যাটালগ, মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ২০০৮
২২. মুহাম্মদ নুরুর রহমান, অভিসন্দর্ভ, ২০০৫, পৃষ্ঠা-৮৫
২৩. ক্যালিগ্রাফ আর্ট, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট ২০০৩, ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, ঢাকা, পৃষ্ঠা-৫
২৪. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, দৈনিক সংগ্রাম, ২৭ জুন ২০০৮, পৃ. ৫
২৫. ক্যালিগ্রাফি, মার্চ-মে ২০০৮, বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি একাডেমী, ঢাকা, পৃ-৮ এবং ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী ২০০৭, শিল্পকলা একাডেমী গ্যালারী।
২৬. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : ঐতিহ্য ও শিল্পবোধের পথে যাত্রা, দৈনিক সংগ্রাম, ১৩ মার্চ, ২০০৫, পৃ. ৮
২৭. আশরাফুল ইসলাম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি ও ক্যালিগ্রাফি বিষয়ক ভাবনা, ভাষা আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর পূর্তি স্মারক (১৯৫২-২০০২), জুলাই ২০০২, ঢাকা সাহিত্য সংস্কৃতি কেন্দ্র, ঢাকা, পৃ. ১২৪-১৩৮
২৮. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : সম্ভাব্যতা ও চলমান ধারা, দৈনিক সংগ্রাম, ৯ মে, ১৯৯৭, পৃ. ৫
২৯. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফি : বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প, দৈনিক বাংলাবাজার, ৩০ জুন, ২০০৬, পৃ. ৫
৩০. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ইন্টারনেটে ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক সংগ্রাম, ২১ মে, ২০০৮, পৃ. ৮
৩০. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ২৬ মে, ২০০৬, পৃ. ৫ এবং নান্দনিকতার নব আলেখ্য বাংলাদেশে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ১১ জুন, ২০০৪, পৃ. ৫ এবং বাংলাদেশের ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি, দৈনিক বাংলাবাজার, ৯ জুলাই, ২০০৪, পৃ. ৫
৩২. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফির নন্দন তত্ত্ব প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ ফেব্র“য়ারী, ২০০৭, পৃ. ৮
৩৩. ২০০৫ সালে সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঢাকার শহীদবাগস্থ বাসভবনে প্রস্ফুটিত ফুলের আকৃতির একটি তুগরা ক্যালিগ্রাফি ফ্রেস্কো করেন শিল্পী মোহাম্মদ আবদুর রহীম। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্যালিগ্রাফি শিল্পী বিভিন্ন স্থানে এ মাধ্যমে কাজ করছেন।
৩৪. মোহাম্মদ আবদুর রহীম, ক্যালিগ্রাফি : বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্প, দৈনিক বাংলাবাজার, ৩০ জুন, ২০০৬, পৃ. ৫
৩৫. ইসলামিক আর্ট অর্গানাইজেশন, ঢাকা তাদের কর্মপরিকল্পনায় এ বিষয়ে সক্রিয় বিবেচনা করছেন।
৩৬.¬ ফাতেমাতুজ জোহরা, ১০ম ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনীতে আবদুর রহীমের শিল্পকর্ম, দৈনিক সংগ্রাম, ২৯ জুলাই, ২০০৮, পৃ. ৫

[লেখক : শিল্পী, গবেষক, গ্রন্থকার ও সেক্রেটারি, ক্যালিগ্রাফি সোসাইটি বাংলাদেশ, প্রশিক্ষক, ক্যালিগ্রাফির শৈলী বিষয়ক কোর্স।]

Saturday, August 7, 2010

A New Calligraphy একটি নতুন ক্যালিগ্রাফি


প্রিয় বন্ধুরা
একটি নতুন ক্যালিগ্রাফি
Dear Friends
I make a new calligraphy.

Mohammad Abdur Rahim write a new calligraphy book


Mohammad Abdur Rahim write a new calligraphy book. It's name- Sulus Lipisaili. It's write in Bangla language. It is a research work.

প্রিয় বন্ধুরা
একটি নতুন ক্যালিগ্রাফি ট্রেডিশনাল স্টাইলের বই লিখেছি। নাম- সুলস লিপিশৈলী। এটি একটি গবেষণা গ্রন্থ এবং খুব সহজে ক্যালিগ্রাফি শেখার বই।

Thursday, July 8, 2010

Moinia Foundation Calligraphy Contest 2010



Moinia Foundation Calligraphy Contest 2010
In memorial of holy Miladunnabi (sm) , Moinia Foundation arranged a calligraphy contest. In this contest a few member of Calligraphy Society won prestigious prizes. Mohammad Abdur Rahim won the First Award in highest group. He get a certificate, a crest and prize money from Iranian ambassador Hasan Farazande in Dhaka.

google ad